‘সানবাথ-বৌদি’ অথবা শাঁখা-নোয়া-সিঁদুরের নতুন পালা

কটিমাত্র বস্ত্রাবৃত অথবা নির্বস্ত্র সানবাথ-রত বঙ্গীয় নারীশরীরের উপরে যথেচ্ছ ঘুরে যাচ্ছে ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশনের পেশাদার ম্যসিওরদের পাকা হাত। বস্ত্র না-থাক, শাঁখা-নোয়া রয়েছে।
চিৎপুর যাত্রাপাড়ার বিজ্ঞাপন বলে যদি কেউ এই লেখার শিরোনামকে ধরে বসেন, তাঁকে দোষ দেওয়া যাবে না। বাঙালির জীবনে গ্লোবোলাইজেশন আসুক অথবা যে কোনও বালাই-ই আসুক, শাঁখা-পলা-নোয়ার পালাগান তার পিছু ছাড়বে বলে মনে হয় না।

‘বৌদির শাঁখা থেকে গেল ফাঁকা’ অথবা ‘নুয়ে পড়া নোয়ার কান্না’ নামে কোনও অশ্রুসজল সামাজিক পালা চিৎপুর যদি না-ও লেখে, ইন্টারনেট কিন্তু লিখে চলেছে নিরন্তর। উপরের ছবিটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। নেট-পানুর মহাসাগরে যে সব স্কুবা-ডুবুরিরা নিয়মিত ডুব দিয়ে ভুড়ভুড়ি কাটেন, তাঁরা জানেন এর ‘রহস্য’টি কী।
ক্রমাগত রিসর্টবাজির প্রবণতা বৃদ্ধি এবং সেই প্রবণতায় বাঙালি গৃহবধূকুলের আত্মসংযোজন কত দূর বিস্তৃত হয়েছে, তা অন্তর্যামী না-জানলেও ইন্টারনেট জানে। বাড়ি নামক কনফাইনমেন্টের চৌহদ্দি থেকে মুক্তির অর্থটি গত দশ বছরে মুহুর্মুহু বদলে চলেছে। সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ তাঁর ‘বারবধূ’ নামের ছোটগল্পটিতে পারিবারিক পরিসরের বাইরে বাঙালি পুরুষের যৌনফুর্তির যে আখ্যানটি লিখেছিলেন, তার কেন্দ্রে থাকা নারীটি ‘গৃহবধূ’ ছিল না। আর সেটাই ছিল গল্পটির প্রধানতম আখ্যান-মোচড়। বারবিলাসিনী নারী আর গৃহবধূত্বের মাঝখানে যে ফাঁকটা অসেতুসম্ভব ছিল সেটাকেই কি ভরাট করে দিল গত ১০ বছরের সমাজেতিহাস?
নেট থেকে এমন ভিডিও অথবা স্টিল ছবি পাওয়া এই মুহূর্তে কোনও ব্যাপারই নয়, যেখানে একান্ত ঘরোয়া পরিসরে নিজেকে উন্মুক্ত করছেন আপাতদৃষ্টিতে একান্ত ঘরোয়া কোনও হাউজ ওয়াইফ বাঙালিনী। এখানেই শেষ নয়, সোয়াপিং, সুইঙ্গিং-আদি রতিকলাতেও যে তাঁরা পারদর্শিনী, তার ডকুমেন্টেশনও রাখা হচ্ছে সযত্নে। অনেক ক্ষেত্রেই স্পষ্ট বোঝা যায়, এই ‘যত্নশীল’ আর্কাইভিস্টটি মহিলাক স্বামী ছাড়া আর কেউই নন। সেক্ষেত্রেও একটা ব্যাপার লক্ষ্যণীয়। কীবাবে এবং কখন বাঙালি মধ্যবিত্তের ঘরেলু নৈতিকতার জায়গাটা এতটা বদলে গেল, তার খবর কিন্তু রাখা হয়নি কোনও ভাবেই। স্বামী তাঁর দামি মোবাইল ক্যামেরায় শ্যুট করে চলেছেন স্ত্রীর সুইঙ্গিং, অথবা নিবিড় আদরে ক্যামেরাবন্দি করছেন বিস্রস্তবসনা গৃহলক্ষ্মীর ম্যাসাজ গ্রহণের দৃশ্য। কটিমাত্র বস্ত্রাবৃত অথবা নির্বস্ত্র সানবাথ-রত বঙ্গীয় নারীশরীরের উপরে যথেচ্ছ ঘুরে যাচ্ছে ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশনের পেশাদার ম্যসিওরদের পাকা হাত। বস্ত্র না-থাক, শাঁখা-নোয়া রয়েছে। একি বাঙালিত্বের অভিজ্ঞানকে সাক্ষী রেখে যৌন-বিপ্লবের উদাত্ত আহ্বান? একি শঙ্খ ঘোষের সেই বিখ্যাত পঙক্তি ‘বাইরে লেনিন, ভিতরে শিব, বেলেঘাটার গলি’-র ইরোটিক রূপান্তরণ?
নাকি এটাই বাঙালির চির-অপরিবর্তনীয় চরিত্র? পরিবর্তন আর স্থবিরতাকে একই পাতে ডালিভাতি করে মৌজ করার কালচার তো সেই ‘ধর্মমঙ্গল’-এর কাল থেকে বহমান। শাঁখা-নোয়া আর বিকিনি, সিঁদুর আর থং প্যান্টি, ফোরজি অ্যান্ডরয়েড আর শনিপুজো এক পাতে বসার নামই কি বিশ্বায়ন? তাব কে য়ে কার কান ধরে টানছে, শাখা-নোয়া থং প্যান্টির নাকি থং প্যান্টি শাঁখা-নোয়ার সেটা বোঝা যায় না এই ধূসর-ধূসরতর জোন-এ। 


EmoticonEmoticon