সিঙ্গুরের মমতা-আবেগে ঘাটতি! সভা ভরাতে আনতে হল বাইরের লোক

কয়েক বছর আগেও তাঁকে ঘিরে আবেগের স্রোতে ভাসত সিঙ্গুর। তৃণমূলের জমি আন্দোলনের সেই আঁতুরঘরে শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা ভরাতে বাইরে থেকে লোক আনতে হল শাসকদলকে। আর সেই সভায় মমতা ছাড়া অন্য কোনও বক্তা একবারও জমি ফেরতের কথা উচ্চারণ করলেন না।
কয়েক বছর আগেও তাঁকে ঘিরে আবেগের স্রোতে ভাসত সিঙ্গুর। তৃণমূলের জমি আন্দোলনের সেই আঁতুরঘরে শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা ভরাতে বাইরে থেকে লোক আনতে হল শাসকদলকে। আর সেই সভায় মমতা ছাড়া অন্য কোনও বক্তা একবারও জমি ফেরতের কথা উচ্চারণ করলেন না।
সিঙ্গুর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূলপ্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের সমর্থনে এদিন সিঙ্গুরের অপূর্বপুর ফুটবল মাঠে নির্বাচনী সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সিঙ্গুর ছাড়াও ওই সভায় হরিপাল, সপ্তগ্রাম, ধনেখালি ও তারকেশ্বর বিধানসভা এলাকার তৃণমূল সমর্থকদের একাংশ উপস্থিত ছিলেন। সভা শুরু হওয়ার কথা ছিল বিকেল ৪টেয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার সভাস্থলের কাছে পৌঁছয় ৫টা ২০ মিনিটে। তখনও মাঠ পুরো ভরেনি। এরপর দু’টি বড় মিছিল সভাস্থলে ঢুকলে মাঠ কিছুটা ভরে। তবে মমতার বক্তৃতা শেষ হওয়ার আগেই সভাস্থল ছাড়তে দেখা যায় অনেককে। 
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা ছেড়ে উঠে যাচ্ছেন দর্শকেরা 
রাজনীতির কারবারিদের একাংশের ব্যাখ্যা, ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তৃণমূল ক্ষমতায় এলে ‘অনিচ্ছুক’ কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তারপর তৃণমূল ক্ষমতা এলেও সিঙ্গুরে টাটাদের কারখানার জমি ফেরত পাননি ‘অনিচ্ছুক’ কৃষকেরা। এর জেরেই টান পড়েছে মমতা-আবেগে। 
এদিন মমতা ছাড়াও বক্তৃতা করেন রবীন্দ্রনাথ এবং হরিপাল কেন্দ্রের তৃণমূলপ্রার্থী বেচারাম মান্না। দু’জনের কেউই জমি ফেরতের বিষয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। শুধু মমতা তাঁর মিনিট পনেরোর বক্তৃতায় জানিয়েছেন, জমি ফেরত দেওয়া তাঁর সরকারের অঙ্গীকার। কবে তা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে অবশ্য মুখ খোলেননি মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বেঁচে থাকতে, আপনাদের উপর কোনও অন্যায় হতে দেব না। যতদিন না সিঙ্গুরের মানুষ জমি ফেরত পাচ্ছেন, আমরা দু’টাকা কিলো দরে চাল দেব।’’

এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ক্ষমতায় আসার পরেই আমরা সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণ করেছিলাম। ওই জমি এখন আমাদের হাতে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়েছে। সেই মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনারা বিচার পাবেন।’’ সিঙ্গুরের জমি এখন তাঁদের হাতে রয়েছে, মমতার এই দাবি প্রসঙ্গে এদিন সিঙ্গুরের জোটপ্রার্থী তথা সিপিএম নেতা রবীন দেব ‘এবেলা’কে বলেন, ‘‘হাইকোর্টে হেরে গিয়েছেন। মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে। বিচারাধীন বিষয়ে উনি কীভাবে এই দাবি করেন?’’ প্রসঙ্গত, এদিন সিঙ্গুরের বড়ায় রবীনের সমর্থনে সভা করেন কংগ্রেসনেতা সোমেন মিত্র এবং সিপিএমনেতা      মহম্মদ সেলিম। 
সিঙ্গুরে গত পাঁচ বছরে তাঁর সরকার কী কী উন্নয়নের কাজ করেছে এদিন তারও ফিরিস্তি দেন তৃণমূলনেত্রী। তবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তিনি বারবারই তুলেছেন জমি ফেরতের কথা। মমতা বলেন, ‘‘যেদিন আপনারা মামলায় জিতে যাবেন, সব ফেরত পাবেন, সেদিন গোটা পৃথিবীর কৃষিজমি আন্দোলনের ঠিকানা হবে সিঙ্গুর।’’
তবে মুখ্যমন্ত্রী যতই জমি ফেরতের আশ্বাস দিন, তাঁকে ঘিরে যে আগের আবেগ আর নেই, তা দৃশ্যতই স্পষ্ট। কেন আবেগে টান? সিঙ্গুরের তৃণমূলনেতা মহাদেব দাস বলেন, ‘‘আবেগ আছেই। তবে জমি ফেরতের দাবিও সিঙ্গুরের মানুষের রয়েছে। কিন্তু তাঁরা এটাও জানেন যে, জমি কেড়ে নিয়েছিল সিপিএম। তৃণমূল নয়।’’ প্রসঙ্গত, এদিন সভামঞ্চে থাকলেও একবারও নিজেদের মধ্যে কথা বলেননি রবীন্দ্রনাথ ও বেচারাম।


EmoticonEmoticon